সাধারণত দুই বা ততোধিকের মাঝে কোন পন্য বা অন্য যেকোন কিছুর বিনিময় করাকে ট্রেডিং বলে । অর্থাৎ আমার কাছে একটি জিনিস বা পন্য অতিরিক্ত রয়েছে । অন্য কারো সাথে সেই জিনিস বা পন্যকে বিনিময় করাকেই ট্রেডিং বুঝায় । নতুন হিসেবে মনে রাখা উচিত, ট্রেডিং খুবই কঠিন এবং প্রতিযোগীতামূলক একটি পেশা । সুতরাং ট্রেডিং করলেই যে প্রফিট হবে এমন মনোভাব না রাখাটাই শ্রেষ্ঠ ।
আমরা যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ট্রেডিং করবো তাই আমাদের মনে রাখতে হবে । “আমি যদি ১০০ ডলারের বিটকয়েন বা অন্য কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনি তাহলে অবশ্যই পৃথীবির অন্য কেউ সেই ১০০ ডলারের বিটকয়েন বা অন্য কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিক্রি করতেছি । ঠিক তেমনিভাবেই, আমি যদি এই মূহুর্তে ১০ ডলার প্রফিট করি, তাহলে পৃথিবীর অন্য কেউ সেই ১০ ডলার লস করবে । আবার একইভাবে আমি যদি ১০ ডলার লস করি তাহলেও কেউ না কেউ সেই ১০ ডলার লাভ করবে ।“
নতুন হিসেবে সর্বপ্রথম আমাদের যে দিকে খেয়াল করতে হবে তা হলো “শুরুতেই প্রফিটের আশা করা যাবে না ।” বরং ট্রেডিং শিখার প্রতি মনযোগী হতে হবে । শুরুতেই লাভের আশা করলে মনের মাঝে একই সাথে ভয়-ভীতি এবং লোভ কাজ করবে । যা একজন ট্রেডারকে সবসময় ভুল ট্রেডটি নিতে আগ্রহী করে তোলে । উদাহরণ হিসেবে অক্টোবর-নভেম্বরের মার্কেট-কেই আমরা দেখতে পারি । মার্কেট তখন বুলিশ বা আপট্রেন্ডে ছিলো । যার ফলে নতুন অনেকেই ভেবেছিলেন যে এখন কিনলেই মার্কেট উপরে যাবে, দাম বেড়ে যাবে । আবার যদি না কিনি তাহলে হয়তো যে লাভটুকু হবে তা আমি উপভোগ বা নিতে পারবো না । এই মূহুর্তটিই খুব জটিল একটি মূহুর্ত । একে FOMO (Fear Of Missing Out) বলে । এই জটিল মূহুর্তে বেশিরভাগই ভুল ডিসিশন নিয়ে থাকেন । যার ফলে লাভের আশায় তারা লস করে বসেন ।
একজন নতুন ট্রেডার হিসেবে যা যা থাকা আবশ্যক
পার্সোনাল ওয়ালেট বা নিজস্ব একাউন্টঃ এই ওয়ালেটটি প্রফিট বা লাভকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহার করবেন । এইক্ষেত্রে আপনারা যেকোন কয়েনেরই অরিজিনাল ওয়ালেট ব্যবহার করতে পারেন । তবে আমি এখানে বাইনান্সের ট্রাস্ট ওয়ালেট কে এগিয়ে রাখবো । কারন এটিতে আপনারা একই সাথে অনেকগুলো কয়েনকে সুরক্ষিতভাবে রাখতে পারবেন ।
এক্সচেঞ্জ ওয়ালেটঃ এই ওয়ালেটটি ট্রেডিং বা বিনিময়ের জন্য ব্যবহার করবেন । যাতে অবশ্যই পর্যাপ্ত সুরক্ষা এবং পর্যাপ্ত পরিমানে ভলিউম থাকতে হবে । এক্সচেঞ্জ ওয়ালেট হিসেবে নতুনরা Binance Exchange কে ব্যবহার করতে পারেন । এই এক্সচেঞ্জটি সিকিউরিটি এবং ভলিউম এর দিক থেকে অন্যান্য এক্সচেঞ্জ থেকে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে ।
ট্রেডিং এনালাইসিস শিখাঃ ট্রেডিং এ ক্যারিয়ার করার পূর্বে অবশ্যই এনালাইসিস করা শিখতে হবে । এনালাইসিস এর সাহায্যে কয়েনের দাম কতটুকু উপরে বা নিচে যেতে পারে । যেমন, কখন কোন কয়েনে এন্ট্রি নিতে হবে এবং এক্সিট নিতে হবে । ট্রেডটিতে কতটুকু প্রফিটের চান্স আছে বা কোথায় আপনার স্টপ-লস বসাবেন সেটা নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে । এক কথায় এটিই আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে ।
ট্রেডিং পেয়ারঃ নতুন হিসেবে অবশ্যই যেকোন একটি ট্রেডিং পেয়ারকে শেখার জন্য বেছে নিতে হবে । যেমন, BTC/USDT, ETH/USDT, ETH/BTC এই তিনটি পেয়ার ব্যবহার করে ট্রেডিং শেখার চেষ্টা করাটা নতুনদের জন্য বেশ উপকারী ।
নিজের স্ট্র্যাটেজিঃ পেয়ার সিলেক্টের পর নতুন হিসেবে নিজের একটি স্ট্র্যাটেজি গড়ে তুলতে হবে । তা না হলে ট্রেডিং করে প্রফিট করতে পারলেও সেই প্রফিট ধরে রাখাটা কষ্টকর হয়ে যাবে । আপনারা কিভাবে আপনাদের স্ট্র্যাটেজি বানাতে পারেন তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে একটি আর্টিকেল পেতে coinalap.com এর সাথেই থাকুন ।
নতুন পেয়ার নির্বাচনঃ অবশ্যই এই তিন পেয়ারে মোটামুটি অভিজ্ঞ হবার পরেই অন্য নতুন পেয়ার নির্বাচন করতে হবে । এবার নতুন পেয়ারে নিজের স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করতে হবে । প্রয়োজন অনুযায়ী স্ট্র্যাটেজিতে পরিবর্তন আনতে হবে । প্রত্যেকটি কয়েন পেয়ারে একই স্ট্র্যাটেজি কাজ করবে না । তাই কয়েন অনুযায়ী স্ট্র্যাটেজিকে সাজাতে হবে । এতে আপনার স্ট্র্যাটেজি আরও শক্তিশালী এবং অন্যের থেকে আলাদা হবে ।
সবশেষে ট্রেডিং করার সময় অবশ্যই মাসিক একটি টার্গেট সেট করতে হবে । এই টার্গেট অনুযায়ী ট্রেডিং করতে হবে । কোথাও কনফিউশন হলে চার্টের, পূর্বের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে কোথাও মিল খুজে পাওয়া যায় কিনা । মার্কেটে এখনও “History repeats itself” কথা প্রচলিত আছে । এটি চিরন্তন সত্য কথা । বেশিরভাগ সময়ই মার্কেট পূর্বের ন্যায় আচরণ করে । তাই সবসময়ই মার্কেটে পরিচিত প্যাটার্ন খুজে নিতে হবে ।
আশাকরি এই আর্টিকেল পড়ে আপনি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন ট্রেডিং শুরু করার পূর্বে আপনাকে কি কি প্রস্তুতি নিতে হবে । এবার গুছিয়ে নিন নিজেকে এবং নিজে নিজেই শুরু করে দিন আপনার পড়ালেখা । মনে রাখবেন যত শিখবেন তত প্রফিট করার সুযোগ বেড়ে যাবে ।