Connect with us

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিউজ

“সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক” কিংবা “সিগ্নেচার ব্যাংক” বিপর্যয় ক্রিপ্টোকারেন্সিকে কেন প্রভাবিত করছে?

Published

on

বিটকয়েনের মাস্টার মাইন্ড সাতোশি নাকামোতো হয়তো ১৪ বছর আগে থেকে এই দিনগুলোর কথা ভেবেই কারেন্সি নিয়ে ভিন্নপথে ভেবেছিলেন। ২০০৮ সালের পর আবারও আমেরিকার মতো পলিসিমেকারের ভূমিকায় থাকার মতো একটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা বুড়ো মানুষের দাঁতের মতো নড়বড়ে হয়ে উঠছে। এই ধরনের খবর হজম করা যেকোনো সাধারণ মানুষের পক্ষেই একটু কষ্টকর এবং দুশ্চিন্তারও বটে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক তথা এসভিবি যেটা আমেরিকার ১৬তম বৃহত্তম ব্যাংক মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছে।

 “নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না” বলে একটি প্রবাদ আছে। তার সুত্র ধরেই ইতোমধ্যে চারপাশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক(এসভিবি) ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়ার শোক কাটিয়ে না উঠতেই নিউইয়র্ক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আরেকটি ক্রিপ্টোবান্ধব প্রতিষ্ঠান “সিগ্নেচার ব্যাংক” ও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। 

কিভাবে হলো শেষের শুরু?

স্টার্টআপ বিজনেসের কর্তাদের প্রথম পছন্দ ক্রিপ্টোবান্ধব প্রতিষ্ঠান “সিলিকন ভ্যালি” নামের ব্যাংকটি বুধবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম বৃহৎ ব্যাংকের তকমা নিয়ে সগৌরবে তার দিন শেষ করে এবং গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো তারা হয়তো তহবিল সংগ্রহ করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। কিন্তু এর ৪৮ ঘন্টা পরই ব্যাংকটি তার ৪০ বছরের পথচলার অবসান ঘটায়। 

কোম্পানিটির শেষের শুরু হয় তখন, যখন বুধবার তারা জানায় তাদের ব্যালেন্স শিট বাড়াতে ২.২৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। 

গত বছর প্রযুক্তিখাতে মন্দা আর মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক যখন তাদের সুদের হার বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখনই মূলত তারা সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের সর্বনাশের আয়োজন করে রেখেছিলো, বাকি ছিলো শুধু মঞ্চায়ন। 

এছাড়া ব্যাংকটি তার গ্রাহকদের আমানত ব্যবহার করে  গত বছরকয়েক ধরে  বিলিয়ন ডলার মূল্যের বন্ড কিনেছিলো। তাতেও সমস্যা ছিলো না কারণ, এই ধরনের বিনিয়োগ ব্যাংকের জন্য খুব্ই স্বাভাবিক কিন্তু ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তীতে ঠিক করে দেয়া সুদের হারের সাথে আগের বছরগুলোতে কেনা বন্ডের মূল্যের সামঞ্জস্যতা না থাকায় ব্যাংকটি বিশাল ঝুঁকিতে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ডগুলো ধরে রাখলে অবশ্য এরকমটা হয়না কিন্তু সিলিকন ভ্যালির হাতে সে সুযোগ ছিলো না কারণ সিলিকন ভ্যালির গ্রাহকেরা মূলত স্টার্টআপ ও প্রযুক্তিকেন্দ্রিক যাদের গত বছরের চেয়ে আরো বেশি নগদ অর্থের প্রয়োজন ছিলো। করোনা, ব্যবসায় মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি মিলিয়ে স্টার্টআপগুলো নতুন ফান্ড পাচ্ছিলো না ফলে তাদের জমার টাকায় হাত দিতে হচ্ছিলো যেগুলো সিলিকন ভ্যালির মতো ব্যাংকে জমা ছিলো। 

কোন না কোনভাবে এই খবরটি বুধবার সন্ধ্যার পর ফলাও করে প্রচার হতে থাকে যে, ব্যাংকটি আর্থিক সংকটে আছে এবং ২২৫ কোটি মূল্যের শেয়ার তারা বিক্রি করে এটা মেটাতে চাচ্ছে। এরকম অবস্থায় গ্রাহকরা একযোগে প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার তুলে নেয় বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে যাতে করে শেয়ারের দাম কমে আসে ৬০%।

১০ মার্চ সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ করে দিয়ে ১২ মার্চ অর্থাৎ, মাত্র ৩ দিনের মাথায় নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ সিগ্নেচার ব্যাংকও বন্ধ করে দেয়। সিগ্নেচার ব্যাংক হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পের অন্যতম প্রধান ব্যাংক। সিলভারগেটের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক, যা গত সপ্তাহে তার আসন্ন লিকুইডেশনের(নগদ অর্থসংকট)  ঘোষণা দিয়েছে৷ ফ্যাক্টসেটের দেয়া তথ্য অনুসারে, শুক্রবার সেল-অফে যাওয়া পর্যন্ত তাদের বাজার মূল্য ছিল ৪.৪ বিলিয়ন ডলার।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে “সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক” কিংবা “সিগ্নেচার ব্যাংক” বন্ধ হওয়ার সাথে ক্রিপ্টোমার্কেট কিভাবে জড়িত?

ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ক্রিপ্টোমার্কেটের সাথে ব্যাংকগুলোর সম্পর্ক কোথায়?

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, টেকনিক্যাল ফার্ম, আইনি সংস্থাগুলোকে তাদের ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকে। কিন্তু এসবের পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সি কোম্পানিগুলিকেও তারা বেশ ভালো সেবা দেয়।

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক যেহেতু স্টার্টআপকে বেশিরভাগ পরিসেবা প্রদান করে থেকে সেক্ষেত্রে বলতেই হয় গত কয়েকবছর যতো ধরনের নতুন বিনিয়োগের বাজারে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংবাদ এসেছে, এই ব্যংকগুলো কোন না কোনভাবে নিজেদের ওসব ব্যবসায় যুক্ত করেছে। 

এসব ব্যাংকের  প্রায় ৩০% ব্যাংকের আমানত ক্রিপ্টো শিল্প থেকেই এসেছে।

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের (SVB) আকস্মিক পতন গত সপ্তাহ থেকে ক্রিপ্টো বাজারে প্রভাব রাখতেও শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ক’দিন আগে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ হবার সাথেসাথে “সার্কেল” শিরোনামের বিষয় হয়ে উঠেছে কারণ  SVB-এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্লায়েন্টগুলির মধ্যে একটি ছিলো স্টেবলকয়েন USDC। ইতোমধ্যে তারা একই কারণে মূল্যও হারিয়েছে। সার্কেল যখন জানায় তাদের ৩.৩ বিলিয়ন ডলার সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকে আটকে আছে তখন এটি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। USDC স্টেবলকয়েনের মূলসূত্র ভেঙে ডিপেগ হওয়া শুরু করে। এছাড়াও এই ব্যাংকের বন্ধ হওয়া DAI, FRAX, USDD’কেও প্রভাবিত করেছে। 

এদিকে সিগ্নেচার ব্যাংক বন্ধ হওয়ার ফলেও ক্রিপ্টো বাজার কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এই ব্যাংকটি “সিগনেট(Signet)” নামে একটি পেমেন্ট সিস্টেম চালায় যা ২৪/৭ কাজ করে এবং এটি ক্রিপ্টো কোম্পানিগুলো অফ-র‍্যাম্প অন-র‍্যাম্পের(অন-র‍্যাম্প হচ্ছে প্রচলিত অর্থ দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাকাটা আর তার উল্টোটা করলে তাকে বলা হয় অফ-র‍্যাম্প) জন্য ব্যবহার করতো। এছাড়াও কোম্পানিটি ক্রিপ্টো জায়ান্ট কয়েনবেজ (Coinbase), সার্কেল (Circle),  ওকেএক্স (OKX) এর সাথেও কাজ করে। এদিকে জানা যায়, সিগ্নেচার ব্যাংক বন্ধ হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত “সিগনেট” এখনো পারফর্ম করছে তবে এই মাধ্যমটি তার কিছু গ্রাহক হারিয়েছে।

ট্রেন্ডিং পোস্ট

Copyright 2021-23. All rights reserved © coinalap.com

আমাদের সংবাদ সবার আগে পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন।