গাইডলাইন
ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুনদের করণীয়
Published
1 year agoon
By
writrovertক্রিপ্টোকারেন্সির ক্রমবর্ধমান চাহিদা, নতুন নতুন প্রযুক্তির সমন্বয় এবং বড় বড় বিনিয়োগকারীদের এই মার্কেটের প্রতি আগ্রহ প্রতিদিন ক্রিপ্টো দুনিয়াকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলছে। অর্থনীতির গতানুগতিক ভাবধারার বাইরে গিয়ে নতুন প্রজন্ম ইতোমধ্যে ক্রিপ্টো মার্কেট নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। ট্রেডিং ও ফাইন্যান্সে আগ্রহীদের আইনি সীমাবদ্ধতা ও জ্ঞানের স্বল্পতা বাদ দিলে সবাই মোটামুটি ক্রিপ্টো নিয়ে জানতে চায় এবং বিনিয়োগ করতে চায়। দেশীয় আইনে যেহেতু এটা এখনো অবৈধ তাই আমরা কাউকে এই পথে এখনই বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ প্রদান করতে মোটেও আগ্রহী নই তবে এই মার্কেটের সাথে জ্ঞান, পর্যবেক্ষণ ও প্রযুক্তি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা মূলত উল্লিখিত এই তিনটি দিক বিবেচনা করেই ভবিষ্যতের নতুন বিনিয়োগকারীদের চিন্তা মাথায় রেখে বিনিয়োগের আগে কি কি প্রাথমিক বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করবো। যারা ইতোমধ্যে ক্রিপ্টো মার্কেট সম্পর্কে অনেক জেনেছেন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করেন তাদের জন্য এই লেখা নয় তার পাশাপাশি, ক্রিপ্টোকারেন্সি কী, এর প্রকারভেদ কী ওসব কোর বেসিক নিয়েও আলোচনা করবো না। মার্কেটে মোটামুটিভাবে নতুন একজন বিনিয়োগকারী কোন বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে এখানে বিনিয়োগ করবেন মূলত সেটাই আলোচনার বিষয়।
আমরা এখানে যা যা জানার চেষ্টা করবোঃ
১. ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করার আগে কী বিবেচনা করতে হবে?
২. ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ভাল বিনিয়োগ?
৩. ক্রিপ্টোকারেন্সিতে আপনার কত বিনিয়োগ করা উচিৎ?
৪. ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের সুবিধা।
৫. ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের অসুবিধা।
৬. কীভাবে আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি সুরক্ষিত থাকবে?
৭. কীভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করবেন?
ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ করার আগে কী বিবেচনা করতে হবে?
ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটের সাথে “Volatile” শব্দটা খুবই পরিচিত যার অর্থ “অস্থির”। দামের প্রচুর উপরনিচ হওয়ার কারণে শব্দটা ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে জুড়ে গেছে। ক্রিপ্টো ইকোসিস্টেম সম্পূর্ণ নতুন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়ায় ইনভেস্টর ছাড়াও এই কারেন্সিগুলোর যারা ফাউন্ডার মেম্বার তারাও বয়সে বেশিরভাগই তরুন। সেজন্য কোন কয়েন আসলে সবচেয়ে সফল হবে তা বলা কঠিন। প্রভাবশালী ক্রিপ্টো হলেও সেটা যেকোন সময় ভেঙে পড়তেই পারে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের কারণে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২১ সালে বেশ ভালো প্রফিট দেখানো সত্ত্বেও পরের বছর অর্থ্যাৎ, ২০২২ সালে বেশিরভাগ ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য নাটকীয়ভাবে কমে গিয়েছিল। তাই বিনিয়োগ করার আগমুহূর্তে হাইপ বা ট্রেন্ড ফলো না করে নিজের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞ কারো সাথে বোঝাপড়া করে (মার্কেট ফ্যাক্টরগুলো এনালাইসিস করতে পারে এমন কেউ) প্রতিটি ক্রিপ্টো সম্পর্কে জানা এবং এই বিনিয়োগটি আপনার জন্য অর্থবহ কিনা তা অনুধাবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজের রিসার্চ নিজে করা(DYOR)।
মনে রাখবেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি যে কেউ জেনারেট করতে করতে পারে আর সেজন্যেই এটি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এবং মার্কেটে সার্কুলেট হচ্ছে এইগুলো নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা জরুরি, যাতে আপনি স্ক্যাম এড়িয়ে চলতে পারেন।
পাশাপাশি একটু প্রশ্নের উত্তর নিজের কাছেই খুঁজতে পারেন যে, ❝আপনি কেন ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করতে চান?❞
এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে নতুন হিসেবে অনেক সাহায্য করবে। আপনি একটি যদি ট্রেন্ডে ভেসে ক্যাশ ডাবল করতে চান তাহলে বলবো এই মার্কেটে আপনি বেশিদিন সারভাইভ করতে পারবেন না। আর যদি যথেষ্ট স্ট্রাটেজিক হয়ে আগান বা অন্ততপক্ষে সীমিত গবেষণা করেও এগিয়ে যান ধাপে ধাপে ছোট ইনভেস্ট দিয়ে তাহলে এটি আপনাকে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবেনা। এই ব্যাপারে ক্রিপ্টো ইনভেস্টমেন্ট সাইট স্ট্যাশে (Stash) কর্মরত ডগলাস ফেল্ডম্যানের কিছু পরামর্শ শেয়ার করতে পারি। তিনি বলেছেন,
❝আপনি প্রফিট বা মূলধন হারাবেন না এমন বিশ্বাস নিয়ে কখনোই কোনো কিছুতে বিনিয়োগ করবেন না। ঝুঁকি ছাড়াই প্রচুর অর্থ উপার্জনের সহজ উপায় বলে আসলেই কিছু নেই। আপনার তখনই কোন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করা উচিত যখন আপনি এর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হতে চান। তার পাশাপাশি সম্ভাবনাগুলোতে বিশ্বাস রাখুন এবং দামের বড়সড় পরিবর্তনগুলিকে হজম করতে অভ্যাস করুন।❞
ফেল্ডম্যান বিনিয়োগকারীদের আরো একটি বিষয় বিবেচনা করার পরামর্শ দেন, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ❝যদিও ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি শক্তিশালী দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সুযোগ কিন্তু এই জগতে ডুব দেয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং আপনার মার্কেটে আসার উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশা নিয়ে নিজের কাছে যথেষ্ট সচ্ছ থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। সবসময় দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা (যেটাকে অনেক ক্রিপ্টো দুনিয়ায় HODL বলেও ডাকে) ক্রিপ্টোর মতো দ্রুত উপর-নিচ করতে পারে যেটা এমন এসেটের জন্য যথেষ্ট সত্য। অত্যধিক ভলেটাইল(প্রায়ই ওঠানামা করে এমন) সম্পদে বিনিয়োগ করার সময়, আবেগতাড়িত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই সহজ, যেমন দাম বাড়লে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে কেনা বা দাম কমে গেলে পুনরায় বিক্রি করা। সাধারণত এগুলি ভাল বিনিয়োগের স্ট্রাটেজি নয়।❞
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ভালো বিনিয়োগ?
ক্রিপ্টো আপনার জন্য আদৌ একটি ভাল বিনিয়োগ হবে কি হবেনা তা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। অন্যান্য বিনিয়োগের মতোই, উত্তরটি আর্থিক এবং মনস্তাত্ত্বিক উভয় ক্ষেত্রেই ঝুঁকির। তার পাশাপাশি আপনার পোর্টফোলিও কতটা বৈচিত্র্যময় সেটাও একটা খেয়াল করার বিষয়। ৷
কেবলমাত্র কোন এসেট ট্রেড করার জন্য এভেইলেবল আছে তার মানেই এই নয় যে, এটি আপনার বর্তমান সিচুয়েশনে বিনিয়োগ করার জন্য সঠিক। সর্বোপরি উপরের কথাটি আবারো মনে করিয়ে দিতে চাই যে, সকল ধরনের বিনিয়োগেই ঝুঁকি বহন করার সক্ষমতা আপনার থাকতে হবে, আপনি অর্থ হারাতে পারেন এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে মাথায় রাখতে হবে আপনার।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে আপনার কত বিনিয়োগ করা উচিত?
কিছু বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন যে, আপনার মোট সম্পদ মূল্যের ১%-৫% এর বেশি বিনিয়োগ না করাটাই উত্তম। ক্রিপ্টোতে আপনার পোর্টফোলিওর কতটা বিনিয়োগ করতে হবে তা দেখার সময় ফেল্ডম্যান বলেন, ❝ক্রিপ্টোতে আপনার সামগ্রিক এক্সপোজার সীমিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনার হারানোর সামর্থ্যের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করাও গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ক্রিপ্টোতে সামান্য এক্সপোজার থাকা একটি ভালোমানের পোর্টফোলিওর ঝুঁকি সামঞ্জস্যপূর্ণ রিটার্ন প্রোফাইলকে আরো উন্নত করতে সক্ষম। ক্রিপ্টোতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা উচিত তা আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগ পোর্টফোলিও এবং আপনি আসলে কতটুকু ঝুঁকি নিলে আপনার জন্য সহনশীল মাত্রায় থাকবে সে অনুযায়ী নির্ধারিত হওয়া উচিত।❞
বিষয়টি মাথায় রেখে, ক্রিপ্টোর মধ্যে ভ্যারাইটি বিবেচনা করার আরেকটি অংশ হতে পারর। মানে এক্ষেত্রে ফেল্ডম্যান ”আপনি যে নির্দিষ্ট ক্রিপ্টো সম্পদগুলোকে অনেক বেশি সময় ধরে হোল্ড করে রেখেছেন” সেগুলোর কথা বলছেন।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু কয়েনের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও ভালো এবং দামের হেরফের হওয়ার জন্য কম সংবেদনশীল হতে পারে। সবিমিলিয়ে মোটের উপর ২% এর বেশি ইনভেস্ট করাকে নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের সুবিধা
২০২২ সালের আগে ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির দাম অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের সাথে খুব বেশি সম্পর্ক ছিল না। উদাহরণস্বরূপ স্টক/বন্ড। তাই এই সম্ভাব্য উর্ধ্বগতির এই জায়গাটাতে একটা ছোট এক্সপোজার থাকা ঝুঁকি সামঞ্জস্যপূর্ণ আয়ের ক্ষেত্রে আশার মুখ দেখতে পারে। যদিও ২০২২ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং অন্যান্য সম্পদ শ্রেণীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বেশি ছিল। এটি এই মার্কেটের নতুন কোন ট্রেন্ড কিনা তাও আবার ঠিকভাবে বলা যাচ্ছেনা।
কিছু বিশেষজ্ঞ কিছু নির্দিষ্ট ক্রিপ্টো, যেমন বিটকয়েনকে সোনার সাথে তুলনা করেন: দুটোই ফাঞ্জিবল(বিনিময়যোগ্য) এবং টেকসই কারণ এই ধরনের এসেট সহজে নিঃশেষ হওয়া মোটামুটি কঠিন, তার পাশাপাশি এর সরবরাহ যেহেতু সীমাবদ্ধ তাই এটা দুষ্প্রাপ্যও বটে। এছাড়াও এই এসেটিগুলোর ক্রয়ক্ষমতা কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের হাতে অর্পিত নয়। এই কাজের জন্য ডিস্ট্রিবিউটেড লেজারকে ধন্যবাদ তারা একটি ডিসেন্ট্রালাইজড এবং স্বচ্ছ মাধ্যম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের অসুবিধা
আগেই বলেছি, ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার খুবই অস্থির। দাম কখন বাড়বে বা কমবে তা ভবিষ্যৎবাণী করা কঠিন কখনো কখনো। তাছাড়া দামের বড় পরিবর্তনগুলো কেন হচ্ছে সেটাও অনেকসময় সাথেসাথে বের করা কঠিন।
কীভাবে আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি সুরক্ষিত থাকবে?
অনলাইনের দুনিয়ায় নিরাপত্তা অনেক বিশাল একটা ইস্যু। আর যখন আসে এসেট,ইনভেস্টের কথা তাহলে তো আরো বেশি সতর্ক থাকতে হয়। ক্রিপ্টো ব্লকচেইনগুলি হ্যাক করা খুব কঠিন কাজ হলেও, হ্যাকাররা হ্যাকিংয়ের জন্য যেকোনো পথ অবলম্বন করতে পারে। তাই অনলাইনের যে কোনো কার্যকলাপের আগে এই ঝুঁকির কথা ভাবা উচিত। ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি বর্তমানে খুব বেশি সরকারি নিয়ন্ত্রণের অধীনে নেই, তাই লেনদেনগুলি সুনির্দিষ্ট কোন আইনি সুরক্ষার সাথে জড়িত নয় (স্টকের মতো প্রথাগত নিয়মে)।
তাহলে কীভাবে আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি সুরক্ষিত রাখবেন?
আপনার ক্রিপ্টো বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে সতর্কতা অবলম্বন করতে কিছু টিপস দেয়া যেতে পারে যা আপনাকে কিছুটা সাহায্য করতে পারে। শুধুমাত্র ভালো রেপুটেশন আছে এরকম এক্সচেঞ্জ এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা প্রদানকারীদের সাথে ডিল করুন যেহেতু আপনি মার্কেটে নতুন। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, ফ্যাক্টর ভ্যারিফিকেশন এবং সুরক্ষিত ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে নিজের অ্যাক্সেস সুরক্ষিত করুন। ক্রিপ্টো ব্যবহারকারীদের টার্গেটে পরিণত হতে পারেন এমন ফিশিং স্ক্যাম সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। আপনার পাসওয়ার্ড বা কী(Key) কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
কিভাবে ২০২৩ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করবেন?
ক্রিপ্টো বিনিয়োগ প্রতিদিন আরও জনপ্রিয় আর অ্যাক্সেসযোগ্য হয়ে উঠছে। গতানুগতিক বিনিয়োগের জন্য ব্যবহৃত এক্সচেঞ্জের মতোই বেশ কিছু এক্সচেঞ্জ এখন এভেইলেবল আছে। আপনি তৎক্ষনাৎ একটি অ্যাকাউন্ট সাইন-আপ করতে পারেন। কিন্তু, যে কোনো সম্পদে বিনিয়োগের মতোই, বিনিয়োগের আগে একটি নির্দিষ্ট কয়েন বা মুদ্রার উপর আপনার গবেষণা করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করি। আপনি যদি প্রথমবার ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কীভাবে বিনিয়োগ করবেন তা নিয়ে বেশি ভাবেন তাহলে, নিম্নলিখিত পাঁচটি পদক্ষেপ আপনাকে সামান্য সাহায্য করলেও করতে পারে।
১ম ধাপঃ কোন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে হবে তা বেছে নিন
যেভাবে আপনি একটি কোম্পানির স্টক কেনার আগে তার সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং আর্থিক ক্ষতির মূল্যায়ন করেন, একইভাবে আপনার বাছাই করা পছন্দের ক্রিপ্টো সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। শুধুমাত্র সাধারণ জানাশোনাই শেষ কথা নয় কারণ বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে জালিয়াতির জন্যেও এই ক্ষেত্রটি প্রধান বাহন হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, পাম্প এন্ড ডাম্প স্কিমের কথা বলা যায়। তাই উল্লিখিত জিনিসগুলো বিবেচনায় আনলে কোন স্ক্যামের শিকার না হয়ে ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করা যায়। এ নিয়ে ফেল্ডম্যান জানান যে ❝পাম্প-এন্ড-ডাম্প স্কিমের মত জালিয়াতি এড়াতে, আপনার ছোট/নতুন ক্রিপ্টোগুলিতে বিনিয়োগ করা অনুচিত, বিশেষ করে যেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি লোভনীয় করে প্রচার করা হয়। একটা কথা মনে রাখবেন যে, কোন ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিয়োগের ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা একান্তই আপনার দায়িত্ব এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা আপনার বিনিয়োগের স্বার্থ মাথায় নাও রাখতে পারেন। আপনি একটি সুবিশাল ও স্বনামধন্য ক্রিপ্টোতে ইনভেস্ট করলেও একই ঝুঁকি নিয়েই করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে, আমরা দেখেছি FTX, যেটিকে আগে একটি সম্মানজনক প্ল্যাটফর্ম হিসাবেই বিবেচনা করা হত, অথচ খারাপ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিভাবে ক্লায়েন্টদের তহবিলের অপব্যবহার করেছিল।❞
২য় ধাপঃ একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ নির্বাচন করুন
ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে একটি বিনিময় বা বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই করতে হবে। এখন কথা হচ্ছে একটি এক্সচেঞ্জ নির্বাচন করার সময় আপনি কী কী বিবেচনা করতে পারেন?। যদি প্রাথমিকভাবে বলি তাহলে নিরাপত্তা, ফি, ট্রেডিংয়ের পরিমাণ, ন্যূনতম বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা এবং আপনার পছন্দ করা এক্সচেঞ্জে কেনার জন্য এভেইলেবল ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর ধরন।
৩য় ধাপঃ স্টোরেজ এবং ডিজিটাল ওয়ালেট বিকল্পগুলি বিবেচনা করুন
ক্রিপ্টো সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল এসেট বা সম্পদ। তাই আপনার কয়েন রাখার জন্যেও একটি ডিজিটাল জায়গা প্রয়োজন। ফেল্ডম্যানের মতে একটি ভালো মানের বিকল্প হল আপনার বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম। ❝যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট প্রতিনিয়ত বিকশিত হচ্ছে, বেশিরভাগ নতুন বিনিয়োগকারীরা তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগগুলোকে তারা যে বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন তার সঙ্গে রাখতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন❞ বলে ব্যখ্যা করেছেন এই বিশেষজ্ঞ। ❝নিশ্চিত করুন যে আপনি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম বেছে নিয়েছেন যা আপনার সম্পদের হেফাজত এবং সুরক্ষার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে আপনার কাছে; এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রিত হলে, হ্যাকিং বা সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে ভালভাবে সুরক্ষিত থাকতে হবে এবং প্রচুর আর্থিক বীমা বহন করতে সক্ষম হবে,❞ বলে যোগ করেন ফেল্ডম্যান।
আর আপনি যদি আরও অধিক জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি না রাখার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, আপনার একটি ক্রিপ্টো ওয়ালেটের প্রয়োজন; এগুলোর ব্যক্তিগত কী(Key) থাকে যেটা ব্লকচেইনে রেকর্ড করা আপনার মালিকানার সাথে যুক্ত ডিজিটাল পরিচয় আনলক করে আপনাকে আপনার ক্রিপ্টো অ্যাক্সেস দেয়। আপনি একটি “হট” বা “কোল্ড” ডিজিটাল ওয়ালেট বেছে নিতে পারেন। একটি হট ওয়ালেট অনলাইনের মাধ্যমে অ্যাক্সেসযোগ্য এবং সুবিধাজনকও বটে। অন্যদিকে কোল্ড ওয়ালেট হচ্ছে একটি ফিজিক্যাল স্টোরেজ ডিভাইস, অনেকটা ইউএসবি ড্রাইভের মতো, যা আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি কীগুলিকে সম্পূর্ণ (অফলাইনে) সুরক্ষিত রাখে।
৪র্থ ধাপঃ: কত বিনিয়োগ করবেন তা নির্ধারণ করুন
যেকোন বিনিয়োগের মতোই, আপনি যে পরিমাণ ক্রিপ্টোতে রাখতে চান তা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন আপনার বাজেট কত, ঝুঁকি কিরকম নিতে পারবেন এবং আপনার বিনিয়োগের কৌশল কী এগুলো। এই বিষয়ে ফেল্ডম্যান উল্লেখ করেন, ❝বেশিরভাগ এক্সচেঞ্জই আপনাকে একটি সম্পূর্ণ কয়েন কেনার পরিবর্তে ডলারের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে দেয়, তাই আপনাকে দশ হাজার ডলার হয়তো নিয়ে আসতে হবে না তবে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করতে চাইলে আসলে হাজার হাজার ডলার প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যত ডলার বিনিয়োগ করতে চান তার উপর ফোকাস করুন এবং আপনি যে কয়েনটি কিনতে চান তার সংখ্যার দিকে তাকাবেন না। এছাড়াও, সবসময় মনে রাখবেন, আপনি হারানোর সামর্থ্যের চেয়ে কখনোই বেশি বিনিয়োগ করতে যাবেন না।❞ তাই ঝুঁকি কমাতে আপনার সম্পদের ২% বিনিয়োগ করতে পরামর্শ দিবো।
৫ম ধাপ: আপনার বিনিয়োগ আপনিই পরিচালনা করুন
ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি অসাধারণ বিনিয়োগ কারণ এটি জিনিস কেনার জন্যেও ব্যবহার করতে পারেন আবার একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসাবেও রাখতে পারেন।আপনি কীভাবে আপনার ক্রিপ্টো হোল্ডিংগুলি পরিচালনা করেন তা আপনার বিনিয়োগের কৌশল এবং লক্ষ্যগুলোর উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল।
পরিশেষে, আবারও পাঠকদের মনে করিয়ে দিচ্ছি কয়েন আলাপ টিম কাউকে ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করা বা না করা নিয়ে উৎসাহ প্রদান করেনা এবং উল্লিখিত আর্টিকেলের কোন অংশকে নিজের ইনভেস্টের জন্য মূলমন্ত্র হিসেবে আঁকড়ে ধরতে নিরুৎসাহিত করে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য যতটুকু জানতে পেরেছি ততটুকু জানানো, বাকি বিবেচনা সম্পূর্ণভাবে পাঠকের নিজ দায়িত্বে হওয়া উচিৎ।