Connect with us

ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ

“কোর ডাউ” হোল্ড নাকি সোল্ড ?

Published

on

কয়েন আলাপে আজকের আর্টিকেলে আমি “কোর ডাউ” এর সকল গুনাবলি ও সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো । মনে রাখবেন এটি সম্পূর্ণ লেখকের মতবাদ । কয়েন আলাপ কোনভাবেই কোন প্রজেক্টে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে না ।

কোর ডাউ ফাউন্ডারদের মতে

সংক্ষেপে “কোর ডাউ” (CORE DAO) হল, বিকেন্দ্রীভূত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা । এটি একটি ব্লকচেইন-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যার লক্ষ্য বিকেন্দ্রীভূত অর্থায়ন (DeFi) প্রকল্প এবং অন্যান্য ব্লকচেইন-ভিত্তিক সংস্থাগুলোতে বিকেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক সমাধান প্রদান করে । প্রকল্পটি ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের মত, কোর ব্যবহারকারীদের মধ্যস্থতাকারীদের প্রয়োজন ছাড়াই সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্মার্ট চুক্তির সুবিধা দেয় ।

“কোর ডাউ” (CORE DAO) প্ল্যাটফর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল টোকেন-ওয়েটেড ভোটিং সিস্টেমের ব্যবহার, যা ব্যব্যহারকারীদেরকে তাদের ধারণ করা কোর (CORE) টোকেনের সংখ্যার অনুপাতে প্রস্তাবগুলিতে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেয় । এই সিস্টেমটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন সিদ্ধান্তগুলো একটি ছোট গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সম্প্রদায়ের সর্বোত্তম স্বার্থে নেওয়া হয় । এর শাসন ক্ষমতা ছাড়াও, কোর ডাউ প্ল্যাটফর্ম বিকেন্দ্রীভূত অর্থায়ন (DeFi) প্রকল্প এবং অন্যান্য ব্লকচেইন-ভিত্তিক সংস্থাগুলোকে বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করে ।

এটি বিকেন্দ্রীভূত অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে হোস্ট করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে, একইসাথে এই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কার্যকারিতা পরিচালনা, ট্র্যাকিং এবং রিপোর্ট করার জন্য সকল সরঞ্জামগুলো প্রদান করে । “কোর ডাউ” (CORE DAO) প্রকল্পটি অনেক বিনিয়োগকারী এবং ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে । যারা এটিকে বিকেন্দ্রীভূত অর্থায়ন (DeFi) প্রকল্প এবং অন্যান্য বিকেন্দ্রীকৃত সংস্থাগুলোর সম্মুখীন চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলার জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল সমাধান হিসেবে দেখছে ।

নিম্নের লেখাগুলো সম্পূর্ণভাবেই লেখকের মতবাদ । একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে প্রজেক্টটি কেমন হবে তাই তুলে ধরা হয়েছে ।

ব্লকচেইন ট্রাইলেম্মা নিয়ে ধোঁকাবাজি

আর্টিকেলটি লিখার মূহুর্ত পর্যন্ত (১২/০২/২০২৩) মার্কেটে এমন কোন কয়েন নেই যেটি ব্লকচেইন ট্রাইলেম্মা বৈশিষ্টকে সম্পূর্ণ করে পরিচালিত হচ্ছে । এখন পর্যন্তও বড় বড় প্রজেক্টগুলো এই ট্রাইলেম্মাকে একসাথে বাস্তবায়িত করতে পারেনি । এখানে আমি উদাহরণস্বরূপ প্রজেক্টের হোয়াইট পেপার থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি দেখাচ্ছি ।

কোর ডাউ ও অন্যান্য প্রজেক্টের মধ্যে পার্থক্য

শুধু ইথেরিয়াম প্রজেক্টের উদাহরণ দিলেই আপনি বুঝতে পারবেন আসলে কেন কোর ডাউ প্রজেক্টটি ব্লকচেইন ট্রাইলেম্মাতে ব্যর্থ হতে পারে ।

ইথেরিয়াম এবং ইথেরিয়াম ২.০ তে পার্থক্য হলো মাইনিং মেকানিজমে । শুরুতে ইথেরিয়াম প্রফ অফ ওয়ার্ক মেকানিজমে মাইনিং করা হতো । ইথেরিয়াম মাইনিং করার জন্য আপনার কেবল একটি মোটামুটি মানের গ্রাফিক্স কার্ডসহ কম্পিউটার হলেই হতো । যেকেউ চাইলেই এটিকে মাইনিং করতে পারতো । খুব সহজেই এটি বিকেন্দ্রীভূত ছিলো । তবে সমস্যা ছিলো অত্যাধিক ট্রান্সেকশন হলে, চেইনটিতে ট্রান্সেকশনের সময় এবং ট্রান্সেকশন ফি বেড়ে যেত । এখানে ইথেরিয়াম ব্লকচেইন পরিমাপযোগ্যতা শর্তটি পূরণে ব্যর্থ হতো ।

অপরদিকে ইথেরিয়াম ২.০ প্রুফ অফ ওয়ার্ক থেকে প্রুফ অফ স্টেক মেকানিজমের ব্যবহার শুরু করে । যার ফলে এটিকে মাইনিং করতে হলে আপনাকে বর্তমানে ৩২টি ইথেরিয়ামসহ ভিপিএস অথবা সার্ভারের সাহায্য নিতে হবে । ৩২টি ইথেরিয়ামের বর্তমান মূল্য ৪৯২৮০ মার্কিন ডলার । যা অধিক ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থা করা অসম্ভব । যার কারনে ইথেরিয়াম স্টেকিং কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ । বড় বড় বিনিয়োগকারীরা ইথেরিয়াম স্টেকিং করছেন । যদিও এই আপডেটটি বর্তমানে শতভাগ সম্পূর্ণ হয়নি । তবে এই আপডেটের ফলে ইথেরিয়াম বর্তমানে তার বিকেন্দ্রীকরণ গুণাবলি হারিয়ে ফেলেছে ।

তাই আর্টিকেলটি লিখার মূহুর্ত পর্যন্ত (১২/০২/২০২৩) মার্কেটে এমন কোন কয়েন নেই যেটি ব্লকচেইন ট্রাইলেম্মা বৈশিষ্টকে সম্পূর্ণ করে পরিচালিত হচ্ছে । আর কোর ডাউ ছাড়া আরও বেশ কিছু কয়েন আছে, যেমন কাসপা {Kaspa (KAS)} যারা বর্তমানে এই ট্রাইলেম্মাকে সমাধান করার চেষ্টা করতেছে । তবে বলাবাহুল্যই সকল প্রজেক্টই এই ট্রাইলেম্মা সমাধান প্রসঙ্গে ব্যর্থ ।

সার্টিক(Certik) দ্বারা ভেরিফাইড ও সতর্কতা

সার্টিক হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রজেক্ট গবেষণা ও অডিট ফার্ম । ইতোমধ্যে “কোর ডাউ” সার্টিক দ্বারা সত্যায়িত এবং বেশ কিছু সতর্কতারও ইঙ্গিত পেয়ছে । সার্টিক নিজে এটিকে কেন্দ্রীভূত (Centralized) কয়েন বলেছে ।

সমস্যার বিস্তারিত

কেন্দ্রীভূত হবার কারনে এটিকে সার্টিক বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছে । এই কেন্দ্রীভূত হবার জন্য যদি কোনভাবে প্রজেক্টে হ্যাকাররা আক্রমণ করে তাহলে খুব সহজেই কয়েন চুরি করে নিতে পারবে । আবার প্রজেক্টে যেকোন ধরনের পরিবর্তনও তারা চাইলে করতে পারবে ।

নিয়ন্ত্রিত সাপ্লাই ব্যবস্থা

ইতোমধ্যে যতটুকু সাপ্লাই মার্কেটে দেখা যাচ্ছে তা এয়ারড্রপ বা ফ্রীতে পাওয়া গেছে । তবে এখানে ফ্রীতে পাওয়া সাপ্লাই এর সম্পূর্ণটা মার্কেটে নেই । মোট এয়ারড্রপ এর ৭৫% সাপ্লাই অব্যবহারযোগ্য অবস্থায় রাখা হয়েছে । বাকি ২৫% মার্কেট সার্কুলেশনে রয়েছে । বাকি সাপ্লাই পরবর্তী ২ বছরের প্রতি মাসে অল্প অল্প করে মুক্তি পাবে, অর্থাৎ মার্কেটে আসবে । এখানে একটু ঝামেলা হচ্ছে এয়ারড্রপ এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিলো কেবল মাত্র ২৫.০২৯% বা ৫২৫,৬০০,০০০ টি কোর (CORE) । এই হিসেবে মার্কেটে ১৩১,৪০০,০০০ টি কোর থাকার কথা তবে মার্কেটে রয়েছে ১৩১,২৫০,০০০ টি কোর । যা মোট সাপ্লাইয়ের ৬% মাত্র । কিন্তু ব্লকচেইন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে সার্কুলেশনে কেবল মাত্র ~৪৯,০৬১,৫৩২ টি কোর রয়েছে ।

কয়েনমার্কেট ক্যাপ

বাকি কয়েনের মধ্যে ৮৩৯,৯০০,০০০ টি কোর কয়েন মার্কেটে আসতে ৮১ বছর সময় লাগবে । এগুলো নোড মাইনিং এর মাধ্যমে আসবে ।

নোড মাইনিং কৌশল

নোড মাইনিং পদ্ধতিতে প্রতিটি কয়েনই তাদের বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনাকে হারিয়ে কেন্দ্রীভূত হয়ে যায় । কোর ডাউ-এ এই মূহুর্ত পর্যন্ত কেবল মাত্র ২২টি ভেলিডেটর নোড রয়েছে । যার মধ্যে ১৫টি ভেলিডেটর কোর ডাউ প্রজেক্টের মালিকদের তত্বাবধানে রয়েছে । এদিক থেকে এটি বাইনান্সের মতোই এর বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনাকে হারিয়েছে ।

এক্সচেঞ্জ কৌশল

বর্তমানে “কোর ডাউ” ২০টি এক্সচেঞ্জে ট্রেডিং হচ্ছে । তবে এই সকল এক্সচেঞ্জই দ্বিতীয় স্তরের অথবা তৃতীয় স্তরের নিচের । আবার বেশ কয়েকটি এক্সচেঞ্জ বিকেন্দ্রীভূত । এইসকল বিকেন্দ্রীভূত এক্সচেঞ্জে কয়েন বা টোকেন সংযোজন করতে তেমন কোন কিছুর প্রয়োজন হয় না । কেবল কিছু অর্থ খরচ করে ও অল্প কিছু ট্রান্সেকশন ফি দিয়ে সংযোজন করা যায় । যার ফলে এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি প্রজেক্ট বলাই যায় ।

যদিও এটির হোয়াইট পেপারে বলা হয়েছে বেশ বড় বড় ও নামিদামি ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীরা নাকি এটিকে বেশ ভাল প্রজেক্ট বলেছে । কিন্তু আসলে এমন কিছু এখনও দেখা যায়নি । তবে হ্যাঁ, বেশকিছু ইউটিউবাররা এটিকে ভাল প্রজেক্ট বলে দাবি করেছিলো । কিন্তু মেইননেট আসার পরবর্তীতে এই মতবাদ থেকে অনেক ইউটিউবারকেই সরে আসতে দেখা গেছে । বেশ কিছু ইউটিউবাররা এটিকে অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেও অভিহিত করেছে ।

বর্তমান মূল্য কতটা টেকসই ?

বর্তমানে ৮০০ মিলিয়নের বেশি কোর কয়েন স্টেকিং এ রয়েছে । এই কয়েনগুলো থেকে প্রাপ্ত পুরোষ্কৃত কয়েনগুলো মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে । যার কারনে মার্কেটে তেমন একটা পাম্প-ডাম্প দেখা যাচ্ছে না । যদিও শুরুতে এটির সর্বোচ্চ মূল্য ছিলো ৬.৪৭ ডলার । বেশিরভাগ এয়ারড্রপ ধারণকারীরা কয়েন বিক্রি করে দেয়ার কারনে এটি ৫০% এর বেশি মূল্যমান হারিয়েছে । তবে এই মূল্যমানটিও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অত্যধিক । অদূর ভবিষ্যতে এই মূল্যমান থেকে আরও নিচে নেমে যাবে বলে ধারণা করা যায় ।

এয়ারড্রপ যারা কয়েন পেয়েছেন তাদের করনীয়

যারা এয়ারড্রপের মাধ্যমে কয়েন পেয়ছেন তাদের উচিত হবে বর্তমান মূল্য সকল কয়েন বিক্রি করে দেয়া । যদিও এয়ারড্রপে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগ বিনিয়োগ সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখে না । তাই তাদের উচিত হবে সকল কয়েন বিক্রি করে দেয়া । এটা সম্পূর্ণ ঝুঁকি মুক্ত একটি ব্যবস্থা । কারন আপনার কাছে এখনও ৭৫% কয়েন ফ্রীজ অবস্থায় আছে । তাই এতোগুলো কয়েন সার্কুলেশনে আসলে তখন প্রতিটি কোরের মূল্য হ্রাস পাবে ।

কোর ডাউ প্রতিটি কয়েন ১ ডলার বা তার নিচে বিনিময় হতে দেখা যেতে পারে । তখন প্রজেক্টটি যদি এখনকার মত বেশ সচল থাকে তাহলে এটিতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে । যদিও এটির ব্লকচেইনে ভবিষ্যতে বিভিন্ন নতুন প্রজেক্ট বানানো হতে পারে । তখন পরিস্থিতি দেখেই বিনিয়োগ করাটা বেশ লাভজনক হতে পারে ।

যাইহোক, যেকোন নতুন প্রযুক্তির মতো, এখানেও উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি জড়িত । “কোর ডাউ” (CORE DAO) বা অন্য কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করার আগে আপনার নিজের গবেষণা করে নিবেন । আপনার নিজের ঝুঁকি সহনশীলতা বিবেচনা করে বিনিয়োগ করাটা গুরুত্বপূর্ণ ।

আমাদের সংবাদগুলো সবার আগে পেতে এখনই জয়েন করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে

Continue Reading
Advertisement
Click to comment

মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ট্রেন্ডিং পোস্ট

Copyright 2021-23. All rights reserved © coinalap.com

আমাদের সংবাদ সবার আগে পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন।