ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
“কোর ডাউ” হোল্ড নাকি সোল্ড ?
Published
2 years agoon

কয়েন আলাপে আজকের আর্টিকেলে আমি “কোর ডাউ” এর সকল গুনাবলি ও সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো । মনে রাখবেন এটি সম্পূর্ণ লেখকের মতবাদ । কয়েন আলাপ কোনভাবেই কোন প্রজেক্টে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে না ।
কোর ডাউ ফাউন্ডারদের মতে
সংক্ষেপে “কোর ডাউ” (CORE DAO) হল, বিকেন্দ্রীভূত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা । এটি একটি ব্লকচেইন-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যার লক্ষ্য বিকেন্দ্রীভূত অর্থায়ন (DeFi) প্রকল্প এবং অন্যান্য ব্লকচেইন-ভিত্তিক সংস্থাগুলোতে বিকেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক সমাধান প্রদান করে । প্রকল্পটি ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের মত, কোর ব্যবহারকারীদের মধ্যস্থতাকারীদের প্রয়োজন ছাড়াই সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্মার্ট চুক্তির সুবিধা দেয় ।
“কোর ডাউ” (CORE DAO) প্ল্যাটফর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল টোকেন-ওয়েটেড ভোটিং সিস্টেমের ব্যবহার, যা ব্যব্যহারকারীদেরকে তাদের ধারণ করা কোর (CORE) টোকেনের সংখ্যার অনুপাতে প্রস্তাবগুলিতে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেয় । এই সিস্টেমটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন সিদ্ধান্তগুলো একটি ছোট গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সম্প্রদায়ের সর্বোত্তম স্বার্থে নেওয়া হয় । এর শাসন ক্ষমতা ছাড়াও, কোর ডাউ প্ল্যাটফর্ম বিকেন্দ্রীভূত অর্থায়ন (DeFi) প্রকল্প এবং অন্যান্য ব্লকচেইন-ভিত্তিক সংস্থাগুলোকে বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করে ।
এটি বিকেন্দ্রীভূত অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে হোস্ট করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে, একইসাথে এই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কার্যকারিতা পরিচালনা, ট্র্যাকিং এবং রিপোর্ট করার জন্য সকল সরঞ্জামগুলো প্রদান করে । “কোর ডাউ” (CORE DAO) প্রকল্পটি অনেক বিনিয়োগকারী এবং ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে । যারা এটিকে বিকেন্দ্রীভূত অর্থায়ন (DeFi) প্রকল্প এবং অন্যান্য বিকেন্দ্রীকৃত সংস্থাগুলোর সম্মুখীন চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলার জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল সমাধান হিসেবে দেখছে ।
নিম্নের লেখাগুলো সম্পূর্ণভাবেই লেখকের মতবাদ । একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে প্রজেক্টটি কেমন হবে তাই তুলে ধরা হয়েছে ।
ব্লকচেইন ট্রাইলেম্মা নিয়ে ধোঁকাবাজি
আর্টিকেলটি লিখার মূহুর্ত পর্যন্ত (১২/০২/২০২৩) মার্কেটে এমন কোন কয়েন নেই যেটি ব্লকচেইন ট্রাইলেম্মা বৈশিষ্টকে সম্পূর্ণ করে পরিচালিত হচ্ছে । এখন পর্যন্তও বড় বড় প্রজেক্টগুলো এই ট্রাইলেম্মাকে একসাথে বাস্তবায়িত করতে পারেনি । এখানে আমি উদাহরণস্বরূপ প্রজেক্টের হোয়াইট পেপার থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি দেখাচ্ছি ।

শুধু ইথেরিয়াম প্রজেক্টের উদাহরণ দিলেই আপনি বুঝতে পারবেন আসলে কেন কোর ডাউ প্রজেক্টটি ব্লকচেইন ট্রাইলেম্মাতে ব্যর্থ হতে পারে ।
ইথেরিয়াম এবং ইথেরিয়াম ২.০ তে পার্থক্য হলো মাইনিং মেকানিজমে । শুরুতে ইথেরিয়াম প্রফ অফ ওয়ার্ক মেকানিজমে মাইনিং করা হতো । ইথেরিয়াম মাইনিং করার জন্য আপনার কেবল একটি মোটামুটি মানের গ্রাফিক্স কার্ডসহ কম্পিউটার হলেই হতো । যেকেউ চাইলেই এটিকে মাইনিং করতে পারতো । খুব সহজেই এটি বিকেন্দ্রীভূত ছিলো । তবে সমস্যা ছিলো অত্যাধিক ট্রান্সেকশন হলে, চেইনটিতে ট্রান্সেকশনের সময় এবং ট্রান্সেকশন ফি বেড়ে যেত । এখানে ইথেরিয়াম ব্লকচেইন পরিমাপযোগ্যতা শর্তটি পূরণে ব্যর্থ হতো ।
অপরদিকে ইথেরিয়াম ২.০ প্রুফ অফ ওয়ার্ক থেকে প্রুফ অফ স্টেক মেকানিজমের ব্যবহার শুরু করে । যার ফলে এটিকে মাইনিং করতে হলে আপনাকে বর্তমানে ৩২টি ইথেরিয়ামসহ ভিপিএস অথবা সার্ভারের সাহায্য নিতে হবে । ৩২টি ইথেরিয়ামের বর্তমান মূল্য ৪৯২৮০ মার্কিন ডলার । যা অধিক ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থা করা অসম্ভব । যার কারনে ইথেরিয়াম স্টেকিং কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ । বড় বড় বিনিয়োগকারীরা ইথেরিয়াম স্টেকিং করছেন । যদিও এই আপডেটটি বর্তমানে শতভাগ সম্পূর্ণ হয়নি । তবে এই আপডেটের ফলে ইথেরিয়াম বর্তমানে তার বিকেন্দ্রীকরণ গুণাবলি হারিয়ে ফেলেছে ।
তাই আর্টিকেলটি লিখার মূহুর্ত পর্যন্ত (১২/০২/২০২৩) মার্কেটে এমন কোন কয়েন নেই যেটি ব্লকচেইন ট্রাইলেম্মা বৈশিষ্টকে সম্পূর্ণ করে পরিচালিত হচ্ছে । আর কোর ডাউ ছাড়া আরও বেশ কিছু কয়েন আছে, যেমন কাসপা {Kaspa (KAS)} যারা বর্তমানে এই ট্রাইলেম্মাকে সমাধান করার চেষ্টা করতেছে । তবে বলাবাহুল্যই সকল প্রজেক্টই এই ট্রাইলেম্মা সমাধান প্রসঙ্গে ব্যর্থ ।
সার্টিক(Certik) দ্বারা ভেরিফাইড ও সতর্কতা
সার্টিক হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রজেক্ট গবেষণা ও অডিট ফার্ম । ইতোমধ্যে “কোর ডাউ” সার্টিক দ্বারা সত্যায়িত এবং বেশ কিছু সতর্কতারও ইঙ্গিত পেয়ছে । সার্টিক নিজে এটিকে কেন্দ্রীভূত (Centralized) কয়েন বলেছে ।

কেন্দ্রীভূত হবার কারনে এটিকে সার্টিক বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছে । এই কেন্দ্রীভূত হবার জন্য যদি কোনভাবে প্রজেক্টে হ্যাকাররা আক্রমণ করে তাহলে খুব সহজেই কয়েন চুরি করে নিতে পারবে । আবার প্রজেক্টে যেকোন ধরনের পরিবর্তনও তারা চাইলে করতে পারবে ।
নিয়ন্ত্রিত সাপ্লাই ব্যবস্থা
ইতোমধ্যে যতটুকু সাপ্লাই মার্কেটে দেখা যাচ্ছে তা এয়ারড্রপ বা ফ্রীতে পাওয়া গেছে । তবে এখানে ফ্রীতে পাওয়া সাপ্লাই এর সম্পূর্ণটা মার্কেটে নেই । মোট এয়ারড্রপ এর ৭৫% সাপ্লাই অব্যবহারযোগ্য অবস্থায় রাখা হয়েছে । বাকি ২৫% মার্কেট সার্কুলেশনে রয়েছে । বাকি সাপ্লাই পরবর্তী ২ বছরের প্রতি মাসে অল্প অল্প করে মুক্তি পাবে, অর্থাৎ মার্কেটে আসবে । এখানে একটু ঝামেলা হচ্ছে এয়ারড্রপ এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিলো কেবল মাত্র ২৫.০২৯% বা ৫২৫,৬০০,০০০ টি কোর (CORE) । এই হিসেবে মার্কেটে ১৩১,৪০০,০০০ টি কোর থাকার কথা তবে মার্কেটে রয়েছে ১৩১,২৫০,০০০ টি কোর । যা মোট সাপ্লাইয়ের ৬% মাত্র । কিন্তু ব্লকচেইন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে সার্কুলেশনে কেবল মাত্র ~৪৯,০৬১,৫৩২ টি কোর রয়েছে ।

বাকি কয়েনের মধ্যে ৮৩৯,৯০০,০০০ টি কোর কয়েন মার্কেটে আসতে ৮১ বছর সময় লাগবে । এগুলো নোড মাইনিং এর মাধ্যমে আসবে ।
নোড মাইনিং কৌশল
নোড মাইনিং পদ্ধতিতে প্রতিটি কয়েনই তাদের বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনাকে হারিয়ে কেন্দ্রীভূত হয়ে যায় । কোর ডাউ-এ এই মূহুর্ত পর্যন্ত কেবল মাত্র ২২টি ভেলিডেটর নোড রয়েছে । যার মধ্যে ১৫টি ভেলিডেটর কোর ডাউ প্রজেক্টের মালিকদের তত্বাবধানে রয়েছে । এদিক থেকে এটি বাইনান্সের মতোই এর বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনাকে হারিয়েছে ।
এক্সচেঞ্জ কৌশল
বর্তমানে “কোর ডাউ” ২০টি এক্সচেঞ্জে ট্রেডিং হচ্ছে । তবে এই সকল এক্সচেঞ্জই দ্বিতীয় স্তরের অথবা তৃতীয় স্তরের নিচের । আবার বেশ কয়েকটি এক্সচেঞ্জ বিকেন্দ্রীভূত । এইসকল বিকেন্দ্রীভূত এক্সচেঞ্জে কয়েন বা টোকেন সংযোজন করতে তেমন কোন কিছুর প্রয়োজন হয় না । কেবল কিছু অর্থ খরচ করে ও অল্প কিছু ট্রান্সেকশন ফি দিয়ে সংযোজন করা যায় । যার ফলে এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি প্রজেক্ট বলাই যায় ।
যদিও এটির হোয়াইট পেপারে বলা হয়েছে বেশ বড় বড় ও নামিদামি ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীরা নাকি এটিকে বেশ ভাল প্রজেক্ট বলেছে । কিন্তু আসলে এমন কিছু এখনও দেখা যায়নি । তবে হ্যাঁ, বেশকিছু ইউটিউবাররা এটিকে ভাল প্রজেক্ট বলে দাবি করেছিলো । কিন্তু মেইননেট আসার পরবর্তীতে এই মতবাদ থেকে অনেক ইউটিউবারকেই সরে আসতে দেখা গেছে । বেশ কিছু ইউটিউবাররা এটিকে অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেও অভিহিত করেছে ।
বর্তমান মূল্য কতটা টেকসই ?
বর্তমানে ৮০০ মিলিয়নের বেশি কোর কয়েন স্টেকিং এ রয়েছে । এই কয়েনগুলো থেকে প্রাপ্ত পুরোষ্কৃত কয়েনগুলো মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে । যার কারনে মার্কেটে তেমন একটা পাম্প-ডাম্প দেখা যাচ্ছে না । যদিও শুরুতে এটির সর্বোচ্চ মূল্য ছিলো ৬.৪৭ ডলার । বেশিরভাগ এয়ারড্রপ ধারণকারীরা কয়েন বিক্রি করে দেয়ার কারনে এটি ৫০% এর বেশি মূল্যমান হারিয়েছে । তবে এই মূল্যমানটিও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অত্যধিক । অদূর ভবিষ্যতে এই মূল্যমান থেকে আরও নিচে নেমে যাবে বলে ধারণা করা যায় ।
এয়ারড্রপ যারা কয়েন পেয়েছেন তাদের করনীয়
যারা এয়ারড্রপের মাধ্যমে কয়েন পেয়ছেন তাদের উচিত হবে বর্তমান মূল্য সকল কয়েন বিক্রি করে দেয়া । যদিও এয়ারড্রপে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগ বিনিয়োগ সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখে না । তাই তাদের উচিত হবে সকল কয়েন বিক্রি করে দেয়া । এটা সম্পূর্ণ ঝুঁকি মুক্ত একটি ব্যবস্থা । কারন আপনার কাছে এখনও ৭৫% কয়েন ফ্রীজ অবস্থায় আছে । তাই এতোগুলো কয়েন সার্কুলেশনে আসলে তখন প্রতিটি কোরের মূল্য হ্রাস পাবে ।
কোর ডাউ প্রতিটি কয়েন ১ ডলার বা তার নিচে বিনিময় হতে দেখা যেতে পারে । তখন প্রজেক্টটি যদি এখনকার মত বেশ সচল থাকে তাহলে এটিতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে । যদিও এটির ব্লকচেইনে ভবিষ্যতে বিভিন্ন নতুন প্রজেক্ট বানানো হতে পারে । তখন পরিস্থিতি দেখেই বিনিয়োগ করাটা বেশ লাভজনক হতে পারে ।
যাইহোক, যেকোন নতুন প্রযুক্তির মতো, এখানেও উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি জড়িত । “কোর ডাউ” (CORE DAO) বা অন্য কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করার আগে আপনার নিজের গবেষণা করে নিবেন । আপনার নিজের ঝুঁকি সহনশীলতা বিবেচনা করে বিনিয়োগ করাটা গুরুত্বপূর্ণ ।
আমাদের সংবাদগুলো সবার আগে পেতে এখনই জয়েন করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে ।
Related
আপনি এইগুলো পছন্দ করতে পারেন

ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? কত প্রকার? কিভাবে কাজ করে?

Cryptocurrency meaning in Bengali । ক্রিপ্টোকারেন্সির বাংলা অর্থ কি

সলো মাইনারের বিটকয়েন ব্লক; পেলেন ৭ বিটকয়েন

ওজোন চেইন(Ozone Chain) কেন?

বিটকয়েন মিলিয়নিয়ার ড. জনের মৃত লাশ উদ্ধার

বিটকয়েন মাইনিং কি, বিটকয়েন মাইনিং কিভাবে শুরু করা যায়?

হার্ডওয়্যার ওয়ালেট কি? সেইফপাল হার্ডওয়্যার ওয়ালেট রিভিউ

মালয়েশিয়ার মন্ত্রণালয় ক্রিপ্টো কারেন্সির আইনি দরপত্র প্রস্তাব করেছে

ডোজকয়েন (DOGECOIN)- ক্রিপ্টোকারেন্সি গাইডলাইন
