সম্প্রতি কয়েকদিন যাবত ক্রিপ্টোজগতে বিটকয়েনসহ অন্যান্য কয়েনের দরপতন চলছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ক্রিপ্টোজগতে যারা বিনিয়োগ করেছেন তাদের কাছে এই দরপতন স্বাভাবিক ও কালের নিয়মে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে হলেও, যারা এই জগতে এখনো শিক্ষানবিশ বা অভিজ্ঞতার ভান্ডার সীমিত; তাদের মধ্যে উদ্যেগ ও উৎকন্ঠা দেখা যাচ্ছে। বিটকয়েনে ৩০ দিনে ১৮% এর বেশি দরপতন হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর থেকে এই দরপতন আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। কিছু নন ফানজিবল টোকেন(NFT) গত বছরে চরম উর্ধ্বগতিতে ছিল, সেসব টোকেনের মধ্যেও দরপতনের ছোঁয়া লেগেছে। ফলে পুরো ক্রিপ্টোজগতের মধ্যেই দরপতনের অ-উৎসবমুখর মৌসুম চলছে।
গত-দুই বছরে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। প্রচুর নতুন বিনিয়োগকারী এসেছেন এবং তাদের বিনিয়োগ সমস্ত রেকর্ডকে পেছনে ফেলেছে। কয়েনবেস(Coinbase) এর মতো প্রসিদ্ধ একচেঞ্জ এ ২০২০ সালের প্রথম ভাগে ব্যবহারকারী ছিলেন ৩৭ মিলিয়ন। ২০২১ সালের দ্বিতীয় ভাগে এসে ব্যবহারকারীর সংখ্যা হয় ৬৮ মিলিয়ন এবং শেষ ভাগে এসে ৭৩ মিলিয়নের উন্নীত হয়।
প্রথমত এই সময়ে বিটকয়েন যদি ৪০ হাজারের নিচে নেমে আসে, যারা দীর্ঘদিন ধরে এই জগতে আছেন তাদের জন্য আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত তেমন কিছু হবে না। মাত্র একবছর আগে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসেও বিটকয়েন এই মূল্যে ছিলো। এমনকি সেটি ৩০ হাজারের কিছু নিচেও নেমেছিল। দীর্ঘসময়ের মধ্যে সেটি ছিল মোট দরপতনের ৩৮% মাত্র। সময়ের সবচেয়ে বড় দরপতন ছিল ২০১৮ সালের দরপতন যার হার ছিল প্রায় ৮৪%। ক্রিপ্টোজগতে সেটা ছিল সবচেয়ে বড় ক্রাস।
ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে ‘হাইপ’ (hype) শব্দটি খুবই গুরুত্ব বহন করে। মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধিতে হাইপ এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সর্বোচ্চ (highest) হাইপ এর সময় যারা বিনিয়োগ করেছেন, সম্ভবত তারা এখন সবচেয়ে বেশি ব্যাথা অনুভব করছেন। আর যারা হাইপ বিষয়ে ওয়াকিবহাল, তারা হয়তো সঠিক সময়ে এন্ট্রি নিয়ে সময়ের সদ্ব্যবহার করেছেন। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে সঠিক সময়ে এন্ট্রি নেওয়ার শিক্ষা-সবচেয়ে বড় শিক্ষা। অভীজ্ঞরা দরপতনে ভীত সন্ত্রস্ত হন না। বরং সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। মানি ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে, এই সময়ে বিনিয়োগে আগ্রহী হন সঠিক কয়েন বাছাইয়ের মাধ্যমে। এই বিষয়ে ওয়ারেন বাফেট এর একটি উক্তি খুবই প্রাসঙ্গিকতা বহন করে। তিনি বলেন,” অন্যরা লোভী হলে ভয় পান, আর অন্যরা ভয় পেলে আপনি নিজেই লোভী হন”। সঠিক সময়ে সুযোগ বুঝে এন্ট্রি নেওয়ার ঝুকি নেওয়া অভীজ্ঞতার ছাপ বহন করে।
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় ক্রাস এর ঘটনা ঘটেছিল গত জুলাই মাসে। অনেকেই ভীত হয়েছিলেন। অথচ সেই দরপতন সহজেই পুনরুদ্ধার হয়েছিল। এল সালভাদরে বিটকয়েনের প্রচলন, বিভিন্ন টুইট ও প্রচুর বিনিয়োগে ক্রিপ্টোকারেন্সি তার সর্বোচ্চ মূল্যে পৌছেছিল। অনেকের জন্য দরপতন আশির্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।
এই জগতে যারা সম্প্রতি প্রবেশ করেছেন, বিনিয়োগ করছেন , তাদের জন্য এই ক্রাস আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত ঘটনা। যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস করেন, তবে এই দরপতন আপনার জন্য একধরনের শিক্ষা। দরপতনে কয়েন বিক্রি নয়, বরং হোল্ড করে সুসময়ের জন্য অপেক্ষা করাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা হতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সির সবচেয়ে প্রচলিত বাক্য- ‘হোল্ড ইউ গোল্ড।’ এটিকে আপ্তবাক্য মনে করে সামনে এগিয়ে চলা অভিজ্ঞতার ছাপ হিসেবে পরিগণিত হবে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতের পরিধি বিশাল। গভীরতাও অনেক বেশি। এর প্রতিটা পদক্ষেপে আপনাকে শিখতে হবে, অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে, অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর মত বুদ্ধিমত্তা অর্জন করতে হবে। দরপতনের হ্রাস-বৃদ্ধি এখানে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আপনার নিজস্ব উপলব্ধি, এনালাইসিস, অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সঠিক কয়েনে বিনিয়োগ- আপনাকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই দরপতনে ভীত না হয়ে, পুর্বোক্ত অভিজ্ঞতা ও ইতিহাসকে ব্যবহার করে, দরপতনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় নিন।
Tanvir Rafi
January 9, 2022 at 1:45 pm
ধন্যবাদ ভাই। এভাবেই নতুন নতুন অার্টিকেল দিয়ে নতুনদের সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ 💚
Md Imran Talukder
January 9, 2022 at 1:54 pm
I want to get an article from you about Hardware wallet.
admin
January 9, 2022 at 2:58 pm
ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য। হার্ডওয়্যার ওয়ালেট নিয়ে আমরা অনেক আগেই একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছি। যদি আপনার মনে হয় আরো তথ্য দেয়া লাগবে৷ তাহলে আমাদের জানাতে পারেন- https://www.coinalap.com/হার্ডওয়্যার-ওয়ালেট/